এ্যান্ড্রয়েড ছিলো মোবাইল সফ্টওয়্যার নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাতা ছিল তিন জন- এ্যানডি রুবিন, নিক সিয়ার্স, এবং রিচ মাইনার। পরিমিত অর্থায়ন চলছিলো না এবং কোন বিনিয়োগকারীও আগ্রহ প্রকাশ করছিলো না। স্টিভ পার্লম্যান (রুবিন এর বন্ধু) কিছু ফান্ড সহায়তায় সম্মতি জানালো। রুবিন স্নায়ূচাপের সহিত বলল, “হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভালো করবো”। ইতিমধ্যে অফিস এর বকেয়া ভাড়া কাধে নিয়ে রুবিন ঘুরছে এবং মালিক বিভিন্নভাবে তাড়না দিচ্ছে।
পার্লম্যান ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ডলার উত্তোলন করলো এবং রুবিনকে ধার দিলো। পরের দিনই রুবিন এ্যান্ড্রয়েড এর জন্য সিড ফান্ডিং করলো। ২০০৪ সালে রুবিন তার আগের অবস্থান ফিলে পেলো। কিছু দিন যাওয়ার পর আরও কিছু অর্থ যোগ হলো এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় বিস্তৃত অফিস ভাড়া করলো। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, আজ স্মার্টফোন বাজারে এ্যান্ড্রয়েড রাজত্ব করছে ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারী নিয়ে। সফলতার সিড়ি বেয়ে হাত দিচ্ছে রিস্টওয়াচ, টিভি এবং কার এ। পরিকল্পনা শুনে জানা গেলো, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সকল পণ্যে এ্যান্ড্রয়েড ইনস্টল করা হবে। ৮৫ শতাংশ মার্কেট দখলে, রুবিন টক্কর দিয়েছে দুই জায়ান্ট টেকনোলজি কোম্পানি- এ্যাপল ও মাইক্রোসফ্টকে। যদিও রুবিন একা দেয়নি- সাথে ছিলো পার্লম্যান ও গুগল। শুরু থেকে কারা কারা ছিলো এবং কার অবদান কেমন তা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া ও সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে নিচে গল্প আকারে লিখা হলো:
চমকপ্রদ আইডিয়া এবং ম্যান বিহাইন্ড ইট

সিলিকন ভ্যালিতে ২৯ বছরের প্রযুক্তি অভিজ্ঞ্ এ্যান্ডি রুবিন হলেন টেকনিক্যাল জিনিয়াস, দক্ষ ব্যবসায়ী এবং ডায়নামিক লিডার। পড়াশোনা করেন উটিকা কলেজে। কার্ল জিজ মাইক্রোসকপিতে কাজ করেন দুই বছর (১৯৮৬-৮৭)। কার্ল জিজ এর চাকরি ছেড়ে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, একটি রোবটিক কোম্পানিতে আবার নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৯ সালে বিল ক্যাসওয়েল (এ্যাপলে চাকরিরত ইঞ্জিনিয়ার) এর সাথে বন্ধুত্ব হয়। ততোটা জানাশোনা ছিলো না। তবে, রুবিন বিলকে ছোট একটু সহযোগিতা করে। স্পাউজের সাথে ঝামেলা হওয়ার পর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসতে হয়। তখন রুবিন থাকার ব্যবস্থা করেন। ভার্জ সূত্রমতে, বিল রুবিনকে এ্যাপল এ কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এবং রুবিনও হাত ছাড়া করে নি। কাজ করে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে (১৯৮৯-৯২)। সর্বোপরি, রুবিন একজন উদ্যোক্তা যিনি ভালোবাসেন সৃষ্টি করতে। এখন তা কোডিং হোক আর রোবট বানানোই হোক। প্রথম ক্যামেরায় ব্যবহারের জন্য এন্ড্রয়েডকে ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় তা আর হয়ে ওঠে নি। তাই টিম গঠন করে ক্রিস হোওয়াইট (ওয়েবটিভির ইন্টারফেস ডিজাইনার) এবং নিক সিয়ার্সকে নিয়ে। ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম চালু করার আইডিয়া রুবিন শেয়ার করল।
বন্ধু হতে আসে গুগল
সবাই যখন রুবিনকে ক্রেইজি বলে উপহাস করছিল, অন্য কোন প্রান্ত থেকে পেয়ে গেল আরেক ক্রেইজি সাপোর্টার: ল্যারি পেইজ।

রুবিন এর আইডিয়া অবগতকালে, ল্যারি পেইজ ছিল গুগলের কো-ফাউন্ডার ও প্রেসিডেন্ট। গুগলের কোন এক এক্সিকিউটিভকে বললেন রুবিন-সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে। হয়তো, এটিই ছিলো রুবিনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডাক। গুগল রুবিনকে বলল যে, গুগল সাথে থাকতে চায়। রুবিন-সিয়ার্স উড়ে গেল গুগল হেডকোওয়ার্টার এ (২০০৫)। আনঅফিসিয়ালি সবকিছু জেনে নিলো গুগল। মিটিং শেষ হয়ে গেলো কাজের অগ্রগতিমূলক কিছু হলো না। গুগল কোন সিদ্ধান্ত না জানিয়ে মিটিং শেষ করে। রুবিন-সিয়ার্স ভাবছে আইডিয়াটা হাতছাড়া করলো কিনা। ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর, পেইজের ইনটেনশন বুঝতে পারে। গুগল সরাসরি বলে দিলো তারা এ্যান্ড্রয়েডকে কিনতে চায়। এ্যান্ড্রয়েড কো-ফাউন্ডাররা একটু আঘাত পেল। কিন্তু এন্ড্রয়েডের অর্থায়ন দরকার ছিলো নিদারুনভাবে। সবশেষে, গুগলের প্রস্তাব গ্রহন করতেই হলো। ৫০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে যায় এ্যান্ড্রয়েড ২০০৫ সাল জুলাই মাসে।
মাঠে নামেন গেম চেঞ্জার

প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে এ্যান্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ডিজাইন করলো রুবিন। শুধুমাত্র ফাইন টিউনিং বাকি ছিলো। ফিনিশিং টাচ এর পরই বাজারে আসবে প্রথম এ্যান্ডয়েড ফোন। এমন সময় এ্যাপল ঘোষণা দিলো টাচস্কিন ও ওপেনসোর্স সুবিধা সংবলিত আইফোন। রুবিন এতোটাই অবাক হল যে, সভার পুরো ভাষন শোনার জন্য ড্রাইভারকে ব্যাক করতে বলল। ডগফাইট: হাউ এ্যাপল এ্যান্ড গুগল ওয়েন্ট টু ওয়ার এ্যান্ড স্টার্টেড রিভলিওশন বইতে বলা আছে, রুবিন তখন প্রথম মোবাইলটি বাজারজাত করতে চায় নি। ফলে অরিজিনাল ভার্সন থেকে বিস্তর ব্যবধান রেখে নতুন আরেকটি মডেল দাড় করায়। অরিজিনাল ভার্সনটি ছিলো শুধু ওপেনসোর্স সুবিধা। যেহেতু এ্যাপল বাজি ধরে যে, টাচস্ক্রিন হবে আগামি যুগের সর্বপছন্দের; রুবিনও তখন টাচস্ক্রিন সুবিধা ইনস্টল করে। এখানে স্টিভ জবস ই হয়ে যায় গেইম চেঞ্জার।
তবে অন্য কিছু সুবিধা থাকায় এ্যান্ড্রয়েড স্বতন্ত্র অবস্থান নিশ্চিত করে
বিজন্যাস ইনসাইডার এ ১৫ টি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয় যা এ্যান্ড্রয়েডকে আলাদা করে প্রদর্শন করে। তার মধ্য থেকে কিছু তুলে ধরা হলো:
- আইফোন কিনার আগে নির্বাচন করতে হবে স্টোরেজ কতো জিবি হবে। অধিকাংশ এন্ডয়েড ফোনেই মাইক্রো এসডি কার্ড লাগানোর সুবিধা রাখা হয়। তাই, খুব সহজেই চাহিদা অনুসারে স্টোরেজ কিনা যাবে।
- ব্যাটারি জু্তসই না হলে পরিবর্তন-প্রতিস্থাপন করা যায়। কিন্তু আইফোনে তা সম্ভব নয়।
- মিউজিক কোথা থেকে লোড করা হলো, এ্যান্ড্রয়েড তার তোওয়াক্কা করে না। কিন্তু এ্যাপল এবং আইওএস৮ এ মিউজিক অথবা ফটো লোড দিতে অবশ্যই আই টিউনস ব্যবহার করতে হবে। এমনকি, কম্পিউটারে স্থানান্তর করতে হলেও আই টিউনস ব্যবহার করতে হবে।
- যে কোন মাইক্রো-ইউএসবি ব্যবহার করা যায় চার্জ দেয়ার জন্য। কিন্তু আইফোনে, অবশ্যই এ্যাপল প্রদত্ত লাইটিং ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে।
সুতরাং, কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে গুগল এ্যান্ড্রয়েড সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার নয়। এ্যাপ ডাউলোডের পরিমান ক্রমে বাড়ছেই। গত বছর এন্ড্রয়েড এর ৪৮ বিলিয়ন এ্যাপস ডাউনলোড হয়। তবে এ্যাপল ও কম যায় না। তাদেরও ডাউনলোডের সংখ্যা ৫০ বিলিয়ন ছিল।