মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সারাহ ওয়ার বলেন, প্রায় শত কোম্পানিতে এ্যাডভারটাইজিং ও মার্কেটিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ওইসব কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম যে কিছু সাধারন ভুল এবং কার্মপ্রণালি বটম লাইনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
তার আবিষ্কার করা কতোগুলো ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. কস্ট পার এ্যাকুইজিশন (সিপিএ) রেট না জানা
তাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হতো যে, একটি মার্কেটিং কৌশল একজন ক্লায়েন্টকে কতো পরিমান অর্থ এনে দিতে পারে। উত্তম পন্থা হলো তাদের সিপিএ জানা এবং কতোগুলো “এ্যকুইজিশন” উপযুক্ত তা নির্ধারন করা। প্রাথমিক সময়ে কোম্পানি কি পরিমান ক্রেতা বা ব্যবহারকারি অর্জন করলো, প্রায়ই তা যাচাই করার সুযোগ পেতো না। তাই তারা নিশ্চিত ছিল না, চালিত ক্যাম্পেইন থেকে কী অর্জিত হলো। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, নিশ্চিত হওয়ার আগে সব ডিম এক বাসকেট এ রেখো না। ছোট বাজেটে পরিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন চালান এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করুন। এবং আপনার জন্য উপযোগি কৌশল না পাওযার আগ পর্যন্ত ছোট ক্যাম্পেইন চালিয়ে যান।
২. কনভার্শন রেট না জানা
সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি প্রশ্ন হলো, কনভার্শন রেট কতো? X সংখ্যক উপযুক্ত ও টার্গেট ওয়েবসাইট ভিজিটর থেকে কত সংখ্যককে কনভার্ট করা উচিত? কনভার্শন রেট কম হলে, তার কারন কি? ট্রাফিক এর গুনাগুন, পণ্য অথবা ওয়েবসাইট ডিজাইন? অনেকেই এ বিষয়গুলো হিসেব করে দেখেন না।
৩. দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপণের মান মূল্যায়ন না করা
সকলেই বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে অভ্যস্ত। X পরিমান অর্থ ব্যয় করে, X সংখ্যক ইমপ্রেশন পেয়েছেন এবং কনভার্শন রেট নিয়েও অবগত আছেন। ব্যস, এখানেই শেষ। বিজ্ঞাপনের উত্থান হয় আবার পতনও ঘটে।
অন্য মার্কেটিং কৌশল, পিআর এবং ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এমন নয়। এমন নয় যে, দুই সেকেন্ডের জন্য উপস্থিত হলো আবার চিরতরে বিলিন হয়ে গেলো। পিআর এবং ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপন। দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদী বিজ্ঞাপনের মূল্যায়ন একই পন্থায় হতে পারে না। প্রাথমিক ইমপ্রেশন ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপনের কিছু বাড়তি মূল্য রয়েছে। যেমন:
- সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার (ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস…)
- আলোচনা-পর্যালোচনা
- এসইও
- সবার জন্য সহজলভ্যতা
- বর্ধিত ব্র্যান্ড স্বীকৃতি
- দেখা বা না দেখার চেয়ে পড়াটা হলো উচু পর্যায়ের সম্পৃক্ততা
বিজ্ঞাপন মূল্যায়নে শুধু ইমপ্রেশনের দিকে নজর দিলেই পর্যাপ্ত হবে না। বাজেটকে সর্বোত্তম কাজে লাগাতে হলে, সকল মিডিয়া ভ্যালুকে হিসেব করতে হবে। এর জন্য প্রত্যেক মিডিয়া অথবা কাজের জন্য প্রাইস ট্যাগ লাগান, যেমন: ফেসবুক শেয়ারকে মূল্যায়ন করুন ৫০০ টাকায় এবং অর্গানিক সাইট ভিজিটকে ১০০০ টাকায়।
৪. ইমেইল পাঠক এবং সাইট ভিজিটরদের রি–টার্গেট না করা
পুনরায় টার্গেট করুন যারা ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করে এবং ইমেইল খুলে পড়ে। পুন:টার্গেট ভালো ফলাফল বয়ে আনলে, আপনার জন্য ভালো লক্ষণ হবে যে, তারা পণ্যের প্রতি উৎসাহী।
৫. ব্লগিং না করা
নতুন ব্যবসায় শুরু করেন বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ই চালান নতুন পন্য বাজারে আনতে ব্লগিং টা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় কন্টেন্ট এর পোস্ট দরকার নেই, কিন্তু অফ-সাইট বিজ্ঞাপন এ বিনিয়োগের পূর্বে নিশ্চিত করুন যে কয়েক জোড়া পোস্ট সাইটে পাবলিশ করা আছে। ব্লগিং সাইটে নতুন মাত্রা যোগ করে, আস্থা সৃষ্টি করে এবং অন্য মার্কেটিং প্রোগ্রামে সম্পৃক্ততা বাড়ায়।
ব্লগিং না করা অনেকগুলো ভুলের মধ্যে একটি।
ব্লগ ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ায়। কাস্টমার এনগেজমেন্ট বাড়ায়।
ব্লগ কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে।
এটি কাস্টমার এবং আপনার মাঝে ইন্টারেকশন বাড়ানোর সৃজনশীল পন্থা। ব্লগপোস্টে কমেন্ট করতে দিন।
আপনি তাদের কমেন্টে রিপ্লাই দিন। এর মাধ্যমে কাস্টমারের ফিডব্যাক নিতে পারবেন।
৬. অগোছালো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন বাজেট থাকে। অনেকেই পরীক্ষামূলক হিসেবে অনেক খরচ করতে পারে, অন্য দিকে, কেউ কেউ পয়সা হিসেব করে চলে। কোন ক্যাম্পেইন চালানোর আগে নিশ্চিত করুন যে, আপনার স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রয়েছে। স্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্টতা ছাড়া নির্ধারন করতে পারবেন না আপনার জন্য উপযুক্ত পন্থা কোনটি। তাছাড়াও ক্যাম্পেইন থেকে যে ফলাফল পাওয়া যাবে তা থেকে সন্তুষ্ট না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। দ্বিতীয় কোন লক্ষ্য থাকলে, প্রাথমিক লক্ষ্যটি আগে নিশ্চিত করে নিন।
৭. ক্যাম্পেইন চলা সময়ে সামজিক মাধ্যমে সক্রিয় না হওয়া
লক্ষ্য করা যায় যে, অনেক ব্র্যান্ডই মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চলা সময়ে সামাজিক মাধ্যমের উত্তর দিতে ভুলে যায়। সামাজিক ক্যাম্পেইনের আগে নিশ্চিত করুন যে, অনলাইনে ভিজিটরের জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়ার জন্য একজন নিয়োজিত রয়েছে।
৮. মোবাইল ইউজারদের ভুলে যাওয়া
প্রত্যেকেরই পকেটে মোবাইল ফোন আছে, এবং এটাকে শুধুমাত্র কল করার জন্যই ব্যবহার করছে না। আপনার পন্য ও সেবা সম্পর্কে জানতেও তার ফোনই ইউজ করছে।
নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের ওভালুক করে যাচ্ছেন না।
কেবল ওয়েবসাট থাকলেই যথেষ্ট নয়।
সাইটটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য অপটিমাইজ করা থাকতে হবে।
কারন?
মোবইল এক্সপেরিয়েন্স ভালো না হলে, কাস্টমার হাড়াতে পারেন।
৫০% রেসপন্ডেন্ট বলেছেন, তারা ওই কোম্পানিকে স্বাভাবিকের থেকে কম ইউজ করবেন যদি তাদের ওয়েবসাইট মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হয়।
যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি মোবাইল এ্যাপলিকেশন ডেভেলপ করে নিন। লোকজন ৯০% সময় ব্যয় করে মোবাইল এ্যাপস ব্যবহার করে।
সবাই এ্যাপস এ্যফোর্ড করতে পারবে না। কিন্তু কিছু কোম্পানি তো এর বেনিফিট নিতেই পারে।
এ্যাপস এ্যফোর্ড করতে না পারলে, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনার ওয়েবসাইট মোবাইল ইউজারদের জন্য অপটিমাইজ করা।
৯. কখনই ডিসকাউন্ট না দেওয়া
কাস্টমারকে রিওয়ার্ড দিন।
ডিসাউন্ট ঘোষনা করুন যাতে লোকজন কিনতে আগ্রহী হয় এবং আপনার স্টোর/ওয়েবসাইট ভিজিট করে।
ডিসকাউন্ট ঘোষণা করলে স্টোর এবং ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বেড়ে যাবে।
রেগুলার প্রাইস থেকে কম মূল্যে বিক্রি করছেন, তার মানে এই না কাস্টমাররা ডিসকাউন্টেড প্রোডাক্ট ছাড়া অন্য পোডাক্ট কিনবে না।
৯১% লোক বলে যে, কুপন কোড থাকলে তারা আবার সেইম স্টোর ভিজিট করবে।
নতুন কাস্টমার অর্জনের জন্য এটি উত্তম পন্থা।
৫০% কাস্টমার বলেছে যে, ডিসকাউন্ট পেলে তাদের ব্র্যান্ড চেঞ্জ করে ফেলবে।
১০. সবাইকে টার্গেট করা
আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা?
কম্পিউটার ইউজ করছে এমন সবাই?
স্মার্টফোন ইউজ করছে এমন সবাই?
নাকি ইন্টারনেট এক্সেস আছে এমন সবাই?
আপনার উত্তর হ্যা হলে, আপনি ভুল করছেন। আপনাকে ন্যারো ডাউন করতে হবে।
ডেমোগ্রাফিক ড্যাটা এনালাইসিস করে, তাদেরকে টার্গেট করতে হবে।
অনুমানের উপর ভিত্তি করে টার্গেট না করাটাই বেটার।
ভুল সবাইই করে। আমি করি আপনি করেন।
সময়ের বিবর্তনে, অনেক অনলাইন মার্কেটিং মিসটেইকস হতে দেখেছি। সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে যেন এর রিপিট না ঘটে তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
চান্সেস আর, আপনার কোম্পনিতেও এই ভুলগুলো হচ্ছে।
বাট, দ্যাটস ওকে।
ইটস নেভার ঠূ লেট টু চ্যান্জ।